ভর্তি সংক্রান্ত তথ্য

চিকিৎসার মেয়াদ কতদিন ?
চিকিৎসার মেয়াদকাল কমপক্ষে ৩ মাস। বিভিন্ন গবেষনার ফলাফল ও অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা যায় যে, স্বল্পমেয়াদী চিকিৎসায় রিল্যাপ্স বা পুনঃ আসক্তির সংখ্যা অনেক বেশি ঘটে থাকে। বিধায় বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের কথা বিবেচনা করে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন উপরোক্ত চিকিৎসার মেয়াদ নির্ধারণ করেছে।

ভর্তির নিয়মাবলী কি কি ?
যে কোন ধর্ম, বর্ণ বা গোত্রের সকল ধরনের মাদক নির্ভরশীল ও মানসিক রোগীরা (পুরুষ) এই কেন্দ্রে ভর্তি হতে পারে। তবে ভর্তি ইচ্ছুক ব্যক্তি ও তার পরিবারের সদস্যদের সেন্টারের নিয়ম-কানুন মেনে চলা ও মেয়াদকাল (মনোযত্ন কেন্দ্রে ৩ মাস) উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত ব্যক্তিকে সেন্টারে রাখার সম্মতি থাকতে হবে। রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক অর্থাৎ ১৮ থেকে ভর্তি করাতে পাবে।

কিভাবে চিকিৎসা করা হয় ?
ভর্তি হবার পরে প্রথম ১৪ দিন মাদক প্রত্যাহার জনিত উপসর্গ উপশমের জন্য চিকিৎসা দেয়া হয় যাকে নির্বিষকরন বা ডিটক্সিফিকেশন বলা হয়। রোগীর মাদক ব্যবহার সম্পর্কিত ইতিহাস জেনে, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। এসময় রোগীকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে বিশ্রামের উপযোগী পরিবেশে রাখা হয়।

চিকিৎসার ব্যয় কত?

মনোযত্ন কেন্দ্রে সিঙ্গেল রুম ৬০,০০০, ডবল সিটের রুম ৪৫,০০০, তিন ও চার জনের সিটের রুম ৩৫,০০০। এছাড়া অন্যান্য খরচ যেমনঃ ডায়গনেস্টিক, রোগীর ব্যবহৃত বস্ত্র, সাবান, পেষ্ট ইত্যাদি সকল ব্যবহার্য জিনিষ, ঔষধ, মাদক ও মানসিক রোগ ছাড়া বিশেষ কোন চিকিৎসার জন্য ও অন্য ক্লিনিক বা হাসপাতালের খরচ অভিভাবককে বহন করতে হবে। ভর্তির সময় ২ মাসের ফি অগ্রিম গ্রহণ করা হয়।

এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন?

আমাদের চিকিৎসা কেন্দ্র মুন্সিগজ্ঞে ৫ তলা বিশিষ্ট নিজেস্ব ভবনে অবস্থিত। মাদক নির্ভরশীলদের চিকিৎসার বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা রয়েছে। নিজেদের খেলার মাঠের চারদিকে ৭ ফুট উঁচু দেয়াল রয়েছে। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে কেন্দ্রের সার্বক্ষনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হয়। এছাড়া অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ও অন্য যেকোন জরুরি অবস্থার জন্য সার্বক্ষনিক পর্যাপ্ত স্টাফসহ সিকিউরিটি গার্ড রয়েছে।

মেয়াদ উত্তীর্ণ হবার আগে বাড়িতে যাবার কোন সুযোগ আছে কিনা ?
মনোযত্নে কেন্দ্রে ৩ মাস পূর্ণ হবার পূর্বে রিলিজের কোন সুযোগ নেই। বিশেষ মানবিক বিষয় যেমন নিকট আত্মীয়র মৃত্যু বা চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল প্রেরন ইত্যাদি বিষয়ে ছাড় দেয়া হয়।

মানসিক চিকিৎসার জন্য কি সেবা রয়েছে ?
যাদের মাদক ব্যবহার করার ফলে মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তারা এখানে ভর্তি হতে পারবে৷ এখানে মনো-চিকিৎসক রয়েছেন৷ তিনি প্রয়োজন অনুসারে মানসিক বা মনোচিকিৎসা দিয়ে থাকেন৷ এছাড়া অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, বিশেষজ্ঞ মনোরোগ চিকিৎসক, চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী ও মাদক নির্ভরশীল বিষয়ক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রাপ্ত অভিজ্ঞ কাউন্সেলর দ্বারা পরিচালিত ।

পরিবারের সদস্যদের জন্য কোন কর্মসূচী রয়েছে ?
মাদক নির্ভরশীলদের চিকিৎসায় পরিবারের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ। আর বেশিরভাগ রোগীর মাদক নেয়ার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় অনেক মাদক নির্ভরশীল ব্যক্তির পরিবারে বিচ্ছেদ, পারিবারিক বিশৃঙ্খলা ও সম্পর্কের জটিলতা রয়েছে। তাই চিকিৎসা চলাকালীর সময় ও চিকিৎসা পরবর্তী পরিচর্যা ও ফলোআপের জন্য পরিবারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে পরিবারের সদস্যদের জন্য মাদক নির্ভরশীল চিকিৎসা সম্পর্কিত ধারণা, রোগীদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ ও সহায়তার জন্য নিয়মিত পারিবারিক সভার আয়োজন করা হয়। এছাড়া পারিবারিক কাউন্সেলিং সেবা দেয়া হয়। আর পরিবারের সাথে ব্যক্তির দেখা করার দিন অর্থাৎ ফ্যামিলি ভিজিটিং ডে-এর ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া পরিবারের সদস্যরা কেন্দ্রের স্টাফদের কাছ থেকে ফোনের মাধ্যমে রোগীর সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে খোজ-খবর নিতে পারেন।

বিনোদনের জন্য কি ব্যবস্থা রয়েছে ?
মাদক নির্ভরশীলতা একটি মনোদৈহিক রোগ। কেন্দ্রে রোগীদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা সর্বপরি বিকাশ লাভের জন্য পর্যাপ্ত খেলাধুলা ও বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে।  আউটডোর বিনোদনের ব্যবস্থা আছে এবং ইনডোর বিনোদনের জন্য দাবা ও ক্যারাম রয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রে সংবাদ পত্র, বইপড়া, টিভি দেখার ব্যবস্থা রয়েছে এবং সপ্তাহে একদিন শিক্ষামূলক চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়। বিভিন্ন সামাজিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপন ছাড়াও বার্ষিক ক্রীড়া ও পিকনিকের আয়োজন করা হয়ে থাকে।

চিকিৎসা পরবর্তী পরিচর্যা ও পুনঃ আসক্তি প্রতিরোধে কি ব্যবস্থা রয়েছে ?

পূর্ণমেয়াদ চিকিৎসার পর ফলোআপের ব্যবস্থা রয়েছে। পরবর্তী পরিচর্যার জন্য কেন্দ্রে নারকোটিকস এনোনিমাস (এন.এ) প্রোগ্রাম আছে। এছাড়া কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ রাখা ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য তাদের উৎসাহ দেয়া হয়। চিকিৎসার পর এখানে রোগীরা বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে সেল্প-হেল্প গ্রুপ গঠন করতে পারে। রোগীর রিলিজের দিন চিকিৎসা পরবর্তী ফলো-আপের তালিকা দিয়ে দেয়া হয়।

কতবার খাবার পরিবেশন করা হয় ?
সাধারনভাবে সকালের নাস্তা, দুপুরেরর খাবার ও রাতের খাবার দেয়া হয়৷ এর সাথে সকালে ও বিকেলে চা-নাস্তা দেয়া হয়৷ রুগীদের পুষ্টিগত দিক লক্ষ্য রেখে উন্নতমানের খাবার দেয়া হয়৷

চিকিৎসাকালীন সময়ে রুগীকে কি বাইরে নেয়া যাবে ?
রুগীকে বাইরে নেয়ার কোন সুযোগ নেই৷ তবে জরুরী কোন বিষয়ে লিখিত অনুমতির মাধ্যমে শুধুমাত্র অভিভাবক নিতে পারবেন এবং নিদিষ্ট সময় পর পুনরায় সেন্টারে নিয়ে য়েতে হবে৷ রোগী সেন্টারের বাইরে নেয়ার পূর্বে সকল অর্থ পরিশোধ করতে হবে৷

পুনর্বাসনের জন্য কোন চাকুরির সুযোগ রয়েছে কি ?
চিকিৎসা পরবর্তী সময়ে রুগীর শারিরীক ও মানসিক, শিক্ষাগত যোগ্যতা, চাকুরী করার মানসিকতার কথা বিবেচনা করে সুযোগ প্রদান করা হয়৷

বাইরে থেকে রুগীকে খাবার দেয়া যাবে কি না ?
বাইরে থেকে কোন খাবার দেয়া যাবে না৷ তবে কোন উৎসব বা বিশেষ আয়োজনে কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে সেন্টারের অবস্থানরত সবার জন্য খাবার দেয়া যাবে৷

কেউ অসুস্থ হলে তার জন্য কি আলাদা খাবার দেয়া হয় ?
কেউ অসুস্থ থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বিশেষ খাবার দেয়া হয়৷

রুগীর ফলোআপের সময় কতদিন ?
সাধারনত সেন্টারে ৩ মাস ফলোআপ করা হয়৷ কারো কারো জন্য এটা বেশীও হতে পারে৷

কি ধরনের চিকিৎসা দেয়া হয় ?
মাদক নির্ভরশীলতার চিকিৎসা একটি জটিল, দীর্ঘ মেয়াদী ও সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলা হয় মাদক নির্ভরশীলতা অনিরাময়যোগ্য রোগ৷ কিন্তু চিকিৎসার পরবর্তী পরামর্শ অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করলে মাদকমুক্ত থাকা সম্ভব।রুগীকে প্রথম ১৪ দিন ডিটক্সিফিকেশন করার পর পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় নেয়া হয়৷ এখানে থেরাপিউটিক কমিউনিটি, নারকোটিকস্ এনোনিমাসের ১২ ধাপ ও মনোসামাজিক শিক্ষা এবং কাউন্সেলিং ও গ্রুপ থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা চলে৷

ডোপ টেস্ট ও এইচ আইভি পরীক্ষা করা হয় কি না ?
সেন্টারে নিজস্ব ল্যাবে অবিভাবকের সম্মতি সাপেক্ষে ডোপ টেস্ট ও রোগীর সম্মতি সাপেক্ষে এইচ আইভি পরীক্ষা করা হয়৷ এক্ষেত্রে গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়৷ সেন্টারে VCT ল্যাব রয়েছে৷

ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাউকে ভর্তি করা হয় ?

বেশিরভাগ রোগীর ভর্তির ইচ্ছা প্রাথমিকভাবে থাকে না। রোগীর অভিভাবক যদি সম্মত থাকেন ও মনোযত্ন কেন্দ্রে ৩ মাস কেন্দ্রে রাখার জন্য মানসিক প্রস্তুত থাকে তাহলে ভর্তি করা হয়। এক্ষেত্রে রোগীকে কেন্দ্র পর্যন্ত অভিভাবকের নিজ দায়িত্বে নিয়ে আসতে হবে কারন অথবা রোগীকে আনার জন্য খরচ প্রদান করতে হবে।

সেন্টারে রোগীদেরকে সিগারেট দেয়া হয় ?
আমাদের কেন্দ্রটি সম্পূর্ণ ধুমপান ও তামাকমুক্ত পরিবেশ। রোগীদেরকে কেন্দ্রে কোন ধরনের তামাক জাতীয় পণ্য সরবরাহ করা হয় না।

আহ্ছানিয়া হেনা আহমেদ মনোযত্ন কেন্দ্র
আলমপুর, হাঁসাড়া, শ্রীনগর, মুন্সিগজ্ঞ,
যোগাযোগ করুন: ০১৮১০১১৩৬৪১, ০১৭৮২৯৬৬৬০৬